ঋত্বিক রোশন যদি পর্দার ‘সুপার থার্টি’ হন তাহলে বাংলার এই অঙ্কবিদ বাস্তবের ‘সুপার থার্টি’। তাঁকে সুপার হান্ড্রেড বললেও ভুল হবে না। একই রক্ত মাংসে ভিন্ন রূপ। অঙ্কের সময় তিনি যেমন বজ্র কঠিন, অঙ্কের বাইরে সেই মানুষটাই উত্তম-সুচিত্রা প্রেমী, মোহনবাগান অন্ত প্রাণ, টেস্ট ক্রিকেট ভক্ত, রবি ঠাকুরের গান নাটক প্রেমী, সঙ্গে সমাজ সংস্কারক। তিনি কেশব চন্দ্র নাগ।
কলেজে পড়ার সময়ে গৃহশিক্ষকতার শুরু করেন ভাস্তাড়া যজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ে থার্ড মাস্টার হিসাবে কর্মজীবনের শুরু। অঙ্কের শিক্ষক হিসাবে তাঁর সুখ্যাতি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কানে আসলে তিনিই কেশবচন্দ্রকে ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনে অঙ্কের শিক্ষক হিসাবে নিয়ে আসেন। দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে এখান থেকেই তিনি প্রধানশিক্ষক হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। স্কুলে পরানোর সময়েই রসা রোডে মেসে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে ১৯৬৪ সাল থেকে থাকতে শুরু করেন দক্ষিণ কলকাতার গোবিন্দ ঘোষাল লেনের নিজস্ব বাড়িতে।
মিত্র ইনস্টিটিউশনে কেশবচন্দ্রের সহকর্মী কবিশেখর কালিদাস রায়ের বাড়িতে বসত সাহিত্যিকদের আড্ডা রসচক্র সাহিত্য সংসদ। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, জলধর সেনের মতো দিকপাল সাহিত্যিকরা সেখানে নিয়মিত আসতেন। কেশবচন্দ্রও সেখানে অন্যতম সদস্য হয়ে ওঠেন। সম্ভবতঃ কবিশেখর কালিদাস রায়ের প্রধান অনুপ্রেরণায় তিরিশের দশকের মাঝামাঝি প্রকাশক ইউএন ধর অ্যান্ড সন্সের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় নব পাটীগণিত। কিছুদিনের মধ্যেই পঞ্চম-ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে পড়ে বইটি। পাঠ্যপুস্তক হিসাবেও স্বীকৃত হয়। ১৯৪২ সাল নাগাদ ক্যালকাটা বুক হাউসের পরেশচন্দ্র ভাওয়ালের আগ্রহাতিশয্যে কেশবচন্দ্রের বাঁধানো অঙ্কের খাতা প্রকাশিত হয় অঙ্কের সহায়িকা ম্যাট্রিক ম্যাথমেটিক্স নামে। বইটি বিশাল জনপ্রিয় হয়।
একে একে আরও অঙ্কের বই প্রকাশিত হয়। ধীরে ধীরে ইংরেজি, হিন্দি, নেপালি, উর্দু ইত্যাদি ভাষায় অনুদিত হয় তাঁর বই। গণিতের বইয়ের অসম্ভব জনপ্রিয়তা দেখে ১৯৫৫ সালে তিনি নাগ পাবলিশিং হাউস নামে নিজের প্রকাশনা সংস্থা খোলেন। তাঁর বই বিক্রি থেকে পাওয়া রয়্যালটির টাকার একটা বড় অংশ দেয়া হয় দুটি চ্যারিটি ফান্ডে; একটি তাঁর নিজের নামে, অন্যটি তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীমণির নাম। নাতনী রত্না বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার বর্তমানে তাঁর কলকাতার বাড়ির একমাত্র বাসিন্দা। তিনি বলেন, “দাদুর কাছে অঙ্ক করেছি। অঙ্ক করাতে বসলে তিনি সম্পূর্ণ অন্য জগতে থাকতেন। মনে থাকত না কে নাতনী, কে ভাইয়ের ছেলে। ভুল হলে রুল। আবার সেই মানুষটাকেই যখন বলেছি উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা দেখাতে দাদুই আমার সঙ্গী ছিল।” একই সঙ্গে তিনি বলেন ,”আমরা যখন স্কুলে পরি তখন নাটক শোনাও যেত না। সন্ধ্যাবেলা ওঁর ঘরে গিয়ে বসে যেতাম।দাদু জানত আমি নাটক শুনতে এসেছি। কিছু বলত না। আবার প্রচন্ড ধার্মিক ছিল দাদু। প্রচন্ড কৌতুক প্রিয়। একবার আমার বন্ধুরা দাদুর সঙ্গে দেখা করতে এলে উনি বলেছিলেন , ” এত মহিলা শুধু ও ওঁকে দেখবে বলে এসেছেন। এটা।দেখেই তাঁর ভালো লাগছে।”
গুড়াপে স্কুল বানিয়েছেন কেশবচন্দ্র ছিলেন শ্রী শ্রী সারদা মায়ের প্রত্যক্ষ শিষ্য। ১৯২৫ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত নিয়মিত ডায়েরি লিখেছেন। নাম দিয়েছিলেন রত্ন-বেদী। এতে রয়েছে বহু কবিতা, ভক্তিমূলক গান। আবার একই সঙ্গে রয়েছে নানা ধরনের রসিকতার কথাও। ধর্ম, ইতিহাস, দর্শন, সাহিত্য যেখানে যে মন্তব্যটি মনে ধরেছে, টুকে রেখেছেন এই খাতায়। আর খাতার উপরে লিখে রেখেছেন বিনা অনুমতিতে পাঠ নিষেধ। এছাড়া অনুবাদকের ভূমিকায় তিনি স্বামী অভেদানন্দের বহু ইংরাজি বক্তৃতা ও ভগিনী নিবেদিতার লেখা অনুবাদ করেছেন।
স্বাধীনতা আন্দোলনেও সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন কেশবচন্দ্র। মহাত্মা গান্ধীর ভারত ছাড় আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাবরণও করেন। গান্ধীজীর ‘অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ’ আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন জাতীয়তাবাদী এই শিক্ষাবিদ। ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর স্বয়ং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য পাওয়া সনির্বন্ধ অনুরোধ ফিরিয়ে দেন। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাকে বলতেন ‘গণিত শিল্পী’।
খেলাধূলাতে তাঁর প্রবল উৎসাহ ছিলো। তিনি আজীবন মোহনবাগান ক্লাবের সদস্য ছিলেন। পয়লা ফেব্রুয়ারী ১৯৮৫ কানপুরে অনুষ্ঠিত ভারত-ইংল্যান্ড টেস্টের ধারাবিবরণী শুনতে শুনতে উত্তেজনায় সেরিব্রাল স্ট্রোক হয়। পর ৬ ফেব্রুয়ারী, ১৯৮৭ কেশবচন্দ্র মারা যান।
কলেজে পড়ার সময়ে গৃহশিক্ষকতার শুরু করেন ভাস্তাড়া যজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ে থার্ড মাস্টার হিসাবে কর্মজীবনের শুরু। অঙ্কের শিক্ষক হিসাবে তাঁর সুখ্যাতি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কানে আসলে তিনিই কেশবচন্দ্রকে ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনে অঙ্কের শিক্ষক হিসাবে নিয়ে আসেন। দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে এখান থেকেই তিনি প্রধানশিক্ষক হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। স্কুলে পরানোর সময়েই রসা রোডে মেসে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে ১৯৬৪ সাল থেকে থাকতে শুরু করেন দক্ষিণ কলকাতার গোবিন্দ ঘোষাল লেনের নিজস্ব বাড়িতে।
মিত্র ইনস্টিটিউশনে কেশবচন্দ্রের সহকর্মী কবিশেখর কালিদাস রায়ের বাড়িতে বসত সাহিত্যিকদের আড্ডা রসচক্র সাহিত্য সংসদ। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, জলধর সেনের মতো দিকপাল সাহিত্যিকরা সেখানে নিয়মিত আসতেন। কেশবচন্দ্রও সেখানে অন্যতম সদস্য হয়ে ওঠেন। সম্ভবতঃ কবিশেখর কালিদাস রায়ের প্রধান অনুপ্রেরণায় তিরিশের দশকের মাঝামাঝি প্রকাশক ইউএন ধর অ্যান্ড সন্সের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় নব পাটীগণিত। কিছুদিনের মধ্যেই পঞ্চম-ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে পড়ে বইটি। পাঠ্যপুস্তক হিসাবেও স্বীকৃত হয়। ১৯৪২ সাল নাগাদ ক্যালকাটা বুক হাউসের পরেশচন্দ্র ভাওয়ালের আগ্রহাতিশয্যে কেশবচন্দ্রের বাঁধানো অঙ্কের খাতা প্রকাশিত হয় অঙ্কের সহায়িকা ম্যাট্রিক ম্যাথমেটিক্স নামে। বইটি বিশাল জনপ্রিয় হয়।
একে একে আরও অঙ্কের বই প্রকাশিত হয়। ধীরে ধীরে ইংরেজি, হিন্দি, নেপালি, উর্দু ইত্যাদি ভাষায় অনুদিত হয় তাঁর বই। গণিতের বইয়ের অসম্ভব জনপ্রিয়তা দেখে ১৯৫৫ সালে তিনি নাগ পাবলিশিং হাউস নামে নিজের প্রকাশনা সংস্থা খোলেন। তাঁর বই বিক্রি থেকে পাওয়া রয়্যালটির টাকার একটা বড় অংশ দেয়া হয় দুটি চ্যারিটি ফান্ডে; একটি তাঁর নিজের নামে, অন্যটি তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীমণির নাম। নাতনী রত্না বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার বর্তমানে তাঁর কলকাতার বাড়ির একমাত্র বাসিন্দা। তিনি বলেন, “দাদুর কাছে অঙ্ক করেছি। অঙ্ক করাতে বসলে তিনি সম্পূর্ণ অন্য জগতে থাকতেন। মনে থাকত না কে নাতনী, কে ভাইয়ের ছেলে। ভুল হলে রুল। আবার সেই মানুষটাকেই যখন বলেছি উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা দেখাতে দাদুই আমার সঙ্গী ছিল।” একই সঙ্গে তিনি বলেন ,”আমরা যখন স্কুলে পরি তখন নাটক শোনাও যেত না। সন্ধ্যাবেলা ওঁর ঘরে গিয়ে বসে যেতাম।দাদু জানত আমি নাটক শুনতে এসেছি। কিছু বলত না। আবার প্রচন্ড ধার্মিক ছিল দাদু। প্রচন্ড কৌতুক প্রিয়। একবার আমার বন্ধুরা দাদুর সঙ্গে দেখা করতে এলে উনি বলেছিলেন , ” এত মহিলা শুধু ও ওঁকে দেখবে বলে এসেছেন। এটা।দেখেই তাঁর ভালো লাগছে।”
গুড়াপে স্কুল বানিয়েছেন কেশবচন্দ্র ছিলেন শ্রী শ্রী সারদা মায়ের প্রত্যক্ষ শিষ্য। ১৯২৫ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত নিয়মিত ডায়েরি লিখেছেন। নাম দিয়েছিলেন রত্ন-বেদী। এতে রয়েছে বহু কবিতা, ভক্তিমূলক গান। আবার একই সঙ্গে রয়েছে নানা ধরনের রসিকতার কথাও। ধর্ম, ইতিহাস, দর্শন, সাহিত্য যেখানে যে মন্তব্যটি মনে ধরেছে, টুকে রেখেছেন এই খাতায়। আর খাতার উপরে লিখে রেখেছেন বিনা অনুমতিতে পাঠ নিষেধ। এছাড়া অনুবাদকের ভূমিকায় তিনি স্বামী অভেদানন্দের বহু ইংরাজি বক্তৃতা ও ভগিনী নিবেদিতার লেখা অনুবাদ করেছেন।
স্বাধীনতা আন্দোলনেও সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন কেশবচন্দ্র। মহাত্মা গান্ধীর ভারত ছাড় আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাবরণও করেন। গান্ধীজীর ‘অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ’ আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন জাতীয়তাবাদী এই শিক্ষাবিদ। ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর স্বয়ং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য পাওয়া সনির্বন্ধ অনুরোধ ফিরিয়ে দেন। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাকে বলতেন ‘গণিত শিল্পী’।
খেলাধূলাতে তাঁর প্রবল উৎসাহ ছিলো। তিনি আজীবন মোহনবাগান ক্লাবের সদস্য ছিলেন। পয়লা ফেব্রুয়ারী ১৯৮৫ কানপুরে অনুষ্ঠিত ভারত-ইংল্যান্ড টেস্টের ধারাবিবরণী শুনতে শুনতে উত্তেজনায় সেরিব্রাল স্ট্রোক হয়। পর ৬ ফেব্রুয়ারী, ১৯৮৭ কেশবচন্দ্র মারা যান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন